অকৃতজ্ঞ
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ১১ অক্টোবর, ২০১৪, ০৫:৩৮:৩৪ বিকাল
কসাইয়ের দোকানটা মাছ বাজারের সাথেই। দু'টো গোশতের দোকান পাশাপাশি। একই মালিকের। গরুর দু'টো রান ঝুলছে। দোকান দু'টির বিপরীত দিকে রাস্তার ওপারে একটা বুড়ো কুকুর, সামনের দু'পায়ের উপর মাথা রেখে চুপচাপ হামাগুড়ি দিয়ে আছে। তবে দৃষ্টি গোশতের দিকে নিবদ্ধ।
ওর থেকে হাত পাঁচেক তফাতে এক পঙ্গু বৃদ্ধ ভিক্ষুক সামনে একটা অ্যালুমিনিয়ামের থালা নিয়ে বসে আছে। কয়েকটি মলিন নোট আর কিছু খুচরা পয়সা দেখা যাচ্ছে সেখানে।
একটি সাদা প্রাইভেট কার এসে রাস্তার এক পাশে থামে। মালিক লোকটি মধ্যবয়স্ক। ড্রাইভারকে সাথে নিয়ে মাছবাজারে ইলিশ বিক্রেতার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। দরদাম করে মূল্য পরিশোধ করে। এক হালি বড় সাইজের ইলিশ নিয়ে ওনার ড্রাইভার গাড়ির বুটে রেখে দেয়। পঙ্গু বৃদ্ধ ভিক্ষুকের নির্ণিমেষ দৃষ্টির সামনে মাছগুলো বুটের ভিতরে চালান হয়ে যায়। মুখটা লোভে লালায় ভরে যায় ভিক্ষুকটির।
প্রাইভেট কারে বসে ইলিশের ক্রেতা বিষয়টি লক্ষ্য করেন। পরক্ষণেই মানিব্যাগ থেকে দু'টো বঙ্গবন্ধু মার্কা পাঁচ টাকার কয়েন একত্রে ভিক্ষুকের থালা লক্ষ্য করে ছুড়ে দেন। নির্ভুল লক্ষ্য! ঝনঝন শব্দ করে সে দু'টি থালায় গিয়ে পড়ে। এরকম গাড়ির মালিকদের লক্ষ্য সবসময়েই নির্ভুল হয়। কয়েন দুটি যথাস্থানে পড়াতে গাড়ির মালিকের চোখ দুটো আত্মতৃপ্তিতে বুজে আসে। এই অবস্থায়ই তাকে নিয়ে সাদা গাড়িটি রাস্তার ধুলো উড়িয়ে সগর্বে চলে যায়।
ধুলোর ভিতরে আরো কিছু ধুলো মেখে বৃদ্ধ ভিক্ষুকটি কুকুরটির দিকে চেয়ে থাকে। এইমাত্র গোশতের দোকান থেকে একটুকরো বাতিল হাড্ডি কুকুরটির সামনে ছুঁড়ে দিয়েছে কসাই লোকটি। মুহুর্তে সজাগ হয়ে উঠে কুকুরটি হাড্ডিটি মুখে নিয়ে কামড়াতে থাকে। এরই ভিতর একবার কসাইয়ের দিকে তাকায়। সেই চোখে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টি দেখে কসাইও আত্মতৃপ্তিতে ভোগে।
বৃদ্ধ ভিক্ষুকের চোখে জিঘাংসা এবং না পাওয়ার ক্ষোভ। সেই অকৃতজ্ঞ দৃষ্টি নিয়ে সে কুকুরটির দিকে চেয়ে থাকে। তার কল্পনায় তখন এক হালি ইলিশ। এই মাছগুলো ওর মুখে যে লোভের লালা তৈরী করেছে, সেগুলো একত্রীত করে অদৃশ্য সাদা প্রাইভেট কারটির মালিককে উদ্দেশ্য করে এক দলা থুথু নিক্ষেপ করে। যদিও একটু আগে এই লোকটি তাকে দশটি টাকা দান করেছে। কিন্তু কল্পনায় ভাজা ইলিশের সুঘ্রাণ তাকে সেটি বিস্মৃত করায়।
ওদিকে শুকনো গোশতবিহীন একটি হাড্ডি মুখে নিয়ে কুকুরটি লেজ নাড়ে আর কিছুক্ষণ পরপর কসাইয়ের দিকে কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে।
# অণুগল্প
বিষয়: সাহিত্য
১১৯৩ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ
জাজাকাল্লাহু খাইর।
সহমত আপনার সাথে।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
জাজাকাল্লাহ।
জাজাকাল্লাহ খাইর।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনি যা বলতে চেয়েছেন তাতে আংশিক সম্মতি থাকলেও ভিক্ষুকের লোভ(?) বা অকৃতজ্ঞতা তুলে ধরাকে সমর্থন করতে পারছিনা!
কুকুর তো অহরহই হাড্ডি পেয়ে থাকে,
কিন্তু ভিক্ষুক ইলিশের কাঁটা পায়না!
ছুঁড়ে দেয়া দশ টাকায় ইলিশ মেলেনা
দশ টাকা ছুঁড়ে দেয়া গাড়ীর মালিকের জন্য নিঃসন্দেহে ভালো কাজ, কিন্তু যথেষ্ট নয়!
এরকম গাড়ির মালিকদের লক্ষ্য সবসময়েই নির্ভুল হয়। খুবই গভীর অর্থবহ যথার্থ মন্তব্য
দশ টাকার জন্য কৃতজ্ঞ না হওয়াকে তুলে ধরেছেন বুঝলাম,
কিন্তু ইলিশের স্বাদের কাঙাল একজন মানুষকে অকৃতজ্ঞ না দেখালেই ভালো হতো!
আপনি যদি তাকে ইলিশের কাঁটা দিতেন, তবে আমি নিশ্চিত, কৃতজ্ঞ হতোনা এমন ভিক্ষুক খুব বেশী নয়!
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
খুব সুন্দর ভাবে আপনার বক্তবয তুলে ধরেছেন।
তবে ভিক্ষুক বলতে এখানে মানব সম্প্রদায়কে তুলে ধরেছি। একটি কুকুরের ভিতরে এমন কিছু গুণ রয়েছে যা মানুষের ভিতরে নেই। কুকুর অল্পে তুষ্ট থাকে, মানুষ থাকে না। কুকুর তার প্রুভু যা-ই দিক না কেন, তাতেই তার প্রতি বিশ্বস্ত থাকে, মানুষ বেঈমানী করে, কুকুর প্রুভূর আদেশ পালন করে, জান দিয়ে দেয়, মানুষ দুনিয়ার মনিবের সাথেও বেঈমানী করে, আর আসল প্রুভূ আল্লাহপাকের আদেশ নিষেধ মেনে চলতে চায় না। অনেক ঘটনা রয়েছে, কুকুর মনিবের জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজে মারা গেছে; অনযদিকে মানুষ পাহারাদারের ভূমিকায় থেকে চুরি, ডাকাতি এমনকি খুন পর্যন্ত করছে আপন মনিবের বাসায়। অহরহুই ঘটছে এ ধরণের ঘটনা।
ভিক্ষুক লোকটি তার অবস্থানে ঐ দশ টাকা পেয়েই কৃতজ্ঞ থাকা উচিত ছিল, তাঁকে ইলিশ দেয়াটা তো গাড়ির মালিকের দায়িত্ব ছিল না। কিন্তু তবুও সে একটি কুকুরের তুলনায় নিকৃষ্ট কাজই করেছে ঘৃনার অভিব্যক্তি দেখিয়ে। কুকুরটি সামান্য একটি শুকনো গোশতবিহীন হাড্ডি পেয়ে কতটা কৃতজ্ঞ হয়েছে, যা দশ টাকা পেয়েও ভিক্ষুকটি হয় নি।
আপনার অনুভুতির জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনার দিক থেকে ব্যাখ্যা যথার্থ,
তবে আমার দৃষ্টি ছিল অন্যত্র-
যখন একই ঘটনায় বিভিন্ন পক্ষের আর্থ-সামাজিক অবস্থানগত পার্থক্য থাকে তখন যিনি যত উপরে থাকেন তাঁর দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা তত বেশী- এটাই ইসলামী বিধান!
ভিক্ষুক লোকটি তার অবস্থানে ঐ দশ টাকা পেয়েই কৃতজ্ঞ থাকা উচিত ছিল, তাঁকে ইলিশ দেয়াটা তো গাড়ির মালিকের দায়িত্ব ছিল না।
দৃষ্টিভংগীর তফাতটা এখানেই
(১)গাড়ির মালিকের দায়িত্ব অনেক কিছুই ছিল
(২)যদি ভিক্ষুকের সাথে সুন্দরভাবে দুকথা বলে তারপর দিতেন তবে ঐ দশটাকাতেই সমাধান হয়ে যেতো, ভিক্ষুকও কৃতজ্ঞ হতেন!
আল্লাহতায়ালা বলেন- যদি তাদের থেকে (অর্থাত অভাবী, আত্মীয়-স্বজন, মিসকীন ও মুসাফির) তোমাকে মুখ ফিরিয়ে নিতে হয় এজন্য যে, এখনো তুমি প্রত্যাশিত রহমতের সন্ধান করে ফিরছো, তাহলে তাদেরকে নরম জবাব দাও৷- বানী ইসরাইল আয়াত ২৮)
বাস্তবতা হলো ব্যস্ত জীবনে খুব অল্পসনহখ্যক মানুষই এতসব খহেয়াল করেন- যদিও করা উচিত!
অনেক মানুষ পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট হয় তা তো আল্লাহতায়ালাই বলে দিয়েছেন
পক্ষান্তরে অনেক কুকুর/পশু অনেক মানুষের চেয়ে অনেক বেশী কৃতজ্ঞ হয়ে থাকে, এ ব্যাপারেও আপনার কথায় একমত!
আবারো অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
আপনিও খুব সুন্দরভাবে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি রেফারেন্স সহ তুলে ধরলেন।
জাজাকাল্লাহ।
এখানে আপনার সব কথাই সঠিক আছে। তবে ভিক্ষুক লোকটি গাড়ির মালিকের কাছে ইলিশ মাছ খাওয়ার আগ্রহটা প্রকাশ করলে গাড়ির মালিককে ১০০% দোষী ঠাউড়ে তাঁকে পাকরাও করতে পারতাম। এখন ওর তাকানো দেখে মালিক লোকটি দশ টাকাই দেয়াটা শ্রেয় মনে করেছে।
তবে সমাজের বিত্তবান হিসেবে নিজের দায়িত্ব সে অন্য আরো বিত্তবানদের মত এড়িয়ে গিয়েছে।
খুব ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মানুষের অন্তরের কথা পড়তে পারার মত চোখ থাকলে অনেক না-বলা কথাই শুণতে পারা যায়!
আসলে সাহিত্যের মাধ্যমেই একজন রূপক ভালোমানুষের চরিত্র সমাজে বাস্তবতা পায়- একজন কলম-যোদ্ধার সফলতা সেখানেই!
হিমুর ঘটনা স্মরণ করা যেতে পারে!
আমি সমালোচনা করলেও গল্প লিখতে পারিনা একদম!!
একটি নতুন পথের দিশা দিয়ে দিলেন। ইনশা আল্লাহ সে পথেই সামনে আগানর চেষ্টা করব।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
তবে কৃতজ্ঞ-অকৃতজ্ঞের ব্যাপারটি ঠিক সুস্পষ্ট করে বলা বেশ জটিল এবং কন্ডিশনাল...
আমার বক্তব্য আবু সাইফ ভাইয়ের মন্তবযের উত্তরে লিখেছি।
অনুভূতি রেখে যাবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
পাঠককে লেখনীর গভীরে নিয়ে গিয়ে কিছু একটা ভাবতে বাধ্য করে যেন আপনার অসাধারণ 'লেখনী' মামুন ভাই!
প্রত্যাশার সীমাহীনতা কষ্টের পরিধিই বাড়ায় শুধু,চাওয়া-পাওয়ার লাগাম যথাযথ টেনে ধরতে পারলে জীবন টা অনেক আনন্দের হয়।
আমরা যে কেন পারি না তা!!!
অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আমার ব্লগে আপনাকে স্বাগতম।
সুন্দর অনুভূতি রেখে গেলেন। সহমত আপনার সাথে।
অনেক শুভেচ্ছা রইলো।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
হ্যা, বাস্তবতার ভিতরেই লুকিয়ে থাকে আমাদের আসল চরিত্র। কারটা প্রকাশ পায়, কারো পায় না।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন